কলকাতা টাইমস 24 : নারী পাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে নিজের অজান্তেই পতিতাপল্লীর অন্ধকার জগতে ঢুকে পড়েছিল বাপ মা হারা নাবালিকা মেয়েটি। বছর কয়েক এভাবে কাটলেও সমাজের মূল স্রোতে ফেরার মরিয়া চেষ্টায় ছিল সে। অবশেষে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের এক পতিতাপল্লীতে খাওয়ার ডেলিভারী করতে আসা স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মেয়েটির। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় ক্লবের সহযোগিতায় এক হল চার হাত। হাঁসি মুখে নববিবাহিতা গেলেন শ্বশুর বাড়ির অন্দরে।বেশ কয়েক বছর আগে মুর্শিদাবাদের লালগোলার বাসিন্দা বাবা-মা হারা নাবালিকা ঝুমা ঘোষকে পতিতাপল্লীতে এনে ফেলেছিল নারী পাচার চক্র। গায়ের জোরে দেহব্যবসায় নামতে বাধ্য করা হয়েছিল তাঁকে। অনেক পথ ঘুরে বর্তমানে মহিষাদলের এক পতিতাপল্লীতে হাজির হয় ঝুমা। এই পতিতাপল্লীতে খাওয়ার সরবরাহ করত পেশায় হোটেল ব্যবসায়ী বাসুলিয়ার বাসিন্দা ছোট্টু দাস। সেই সূত্রেই ঝুমার সঙ্গে ছোট্টুর আলাপ হয়। মাস পাঁচেক আগে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে দুজনে। অন্ধকার জগৎ ছেড়ে আলোয় ফেরার মরিয়া চেষ্টা করতে থাকে ঝুমা।তবে প্রথমদিকে বিষয়টি মেনে নিতে কিছুটা ইতস্তত করতে থাকে ছোট্টুর পরিবার। সেই সঙ্গে মেয়েটিকে পতিতাপল্লী থেকে বের করে আনাটাও সহজ ছিল না। এই সময়েই স্থানীয় নিহারীকা ক্লাবের সদস্যরা দুই প্রেমিক যুগলকে মেলাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ক্লাবের ছেলেরাই পতিতাপল্লী সহ ছেলেটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। এরপর সোমবার রাতে ক্লাবের ছোট্টঘরেই বসে তাঁদের বিয়ের আসর। ছেলেটির পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ঝুমাকে সম্প্রদান করেন ক্লাবের উদ্যোক্তারাই। সংস্থার সদস্য শম্ভুনাথ দাস ভাই হিসেবে মেয়েকে সম্প্রদান করেন।সংস্থার সম্পাূক মানস কুমার বেরা জানান, “পতিতাপল্লীর মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়ে ছোট্টু ক্লাবের কাছে দরবার করে। তাই এমন মহৎ কাজে এগিয়ে আসতে একটুও দেরী করিনি। ছেলেটি পরিবারের পাশাপাশি পতিতাপল্লীতে গিয়েও মেয়েটির বিয়ের ব্যাপারে সবাইকে রাজি করিয়েছি আমরা। এরপরেই দুই প্রেমিক যুগলের চারহাত এক হল”। আর নতুন জীবনে প্রবেশ করে চোখের জল বাঁধ মানছিল না নববিবাহিতার। ঝুমার উক্তি, “পতিতাপল্লীর অন্ধকার জীবন ছেড়ে কোনওদিন শ্বশুর বাড়িতে যেতে পারব তা ভাবতেই পারিনি। ছোট্টুর জেদ আর ক্লাবের সদস্যরা এগিয়ে না এলে এমনটা কিছুতেই সম্ভব হত না। সেই সঙ্গে সবাই আমাকে যেভাবে আপন করে নিয়েছেন তাতে আমি অভিভুত”। আর এমন মহৎ কাজের খবর শুনে ছোট্টু সহ ক্লাবের সদস্যদের প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন সকলেই।
প্রকাশ: