

কলকাতা: কেন্দ্রের অনুমোদন প্রাপ্ত দুটি টিকা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতর। ক্ষণিকের জন্য সেরাম ইন্সটিটিউট ও ভারত বায়োটেকের মধ্যে দেখা গিয়েছিল ভ্যাকসিন যুদ্ধও। কিন্তু এসব এখন অতীত। আগামি ১৬ জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে গণ টিকাকরণের মহাযজ্ঞ। আর সেখানেই ফ্রন্ট ফুটে খেলছে বাংলা। কারণ সার্বিক টিকাকরণে বাকি রাজ্যগুলির থেকে অনেক এগিয়ে বাংলা। তালিকায় একদম শীর্ষে। খোদ মোদী সরকারের রিপোর্টে এমনটাই জানানো হয়েছে। সম্প্রতি ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসছে। যা টিকাকরণের মহাযজ্ঞ শুরু আগে বাড়তি অক্সিজেন যোগাবে রাজ্যবাসী ও নবান্নকে। কারণ প্রথম থেকেই ‘দ্রুত টিকাকরণ’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু কেন্দ্র সরকারের এই সার্ভ রিপোর্টে অনেকটাই স্বস্তিদায়ক।
প্রসঙ্গত সম্প্রতি মোদি সরকারের এনএফএইচএস-৫ (২০১৯-২০) রিপোর্টে ১৪টি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে যে রিপোর্ট কার্ড বা ফ্যাক্ট শিট প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ১২-২৩ মাস পর্যন্ত বয়সের শিশুর টিকাকরণের প্রায় সমস্ত ব্যাপারে ‘এগিয়ে বাংলা’। পিছনে ফেলে দিয়েছে কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, বিহার, অসম সহ বাকি রাজ্যকে। মায়ের মুখে শুনে ও ভ্যাকসিন কার্ড দেখে বাংলার ১২-২৩ পর্যন্ত ৮৭.৮ শতাংশ শিশুরই টিকাকরণ হয়েছে। সেই সূচক গুজরাতে ৭৬.৩, বিহারে ৭১, অসমে ৬৬.৪, কর্ণাটকে ৮৪.১, মহরারাষ্ট্রে ৭৩.৫, তেলেঙ্গানায় ৭৯.১, কেরলে ৭৭.৮ এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ৭৩।
ওই বয়সি বাচ্চাদের পোলিও টিকাকরণে একমাত্র বাংলার সূচক ৯০ শতাংশের উপরে। এছাড়া বিসিজি টিকা দেওয়ার সূচক প্রায় ৯৯ শতাংশ (৯৮.৬)। তারপর রয়েছ গুজরাত (৯৪.৭), কর্ণাটক (৯৭.২), কেরল (৯৭.৬)। শুধু তাই নয়। পিপিটি, এমসিভি, হেপাটাইটিস বি এসিব ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাপারে রাজ্যের হার ৯০ শতাংশের বেশি। বাংলা ছাড়া আর কোনও রাজ্যই এই সবক’টি ক্ষেত্রে ছুঁতে পারেনি বাংলাকে। খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা এসে প্রশংসা করে গিয়েছেন। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, টিকাকরণের সময় বা পরপরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ভ্যাকসিন অ্যাডভার্স এফেক্ট রিপোর্টিং (ভিএইআর) নথিভুক্ত করা এবং ভ্যাকসিন প্রাপকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দিক থেকেও পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে দেশের মধ্যে প্রথম সারিতেই।
তবে এই অভূতপূর্ব সাফল্যের সত্ত্বেও কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না রাজ্য সরকার। কারণ করোনা নতুন রোগ ও তার ভ্যাকসিনও সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয়। তাই নির্ধারিত দিনে যাতে নির্বিঘ্নেই টকাকরণ শুরু করা যায় তাই নিয়ে তৎপরতা তুঙ্গে। সেইমতো জেলাগুলিতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি রাখার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। প্রতি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে চিঠি লিখে, ভ্যাকসিন গ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে আপতকালীন অ্যাড্রেনালিন ইঞ্জেকশন রাখতে বলা হয়েছে। যাতে ভ্যাকসিনেশানের পর হঠাৎ কাঁপুনি, খিঁচুনি, প্রেশার কমে বা বেড়ে যাওয়া, শক ইত্যাদি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে জরুরী ভিত্তিতে অ্যাড্রেনালিন ইঞ্জেকশন দেওয়া যায়।